গোপালগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে নিয়োগ বাণিজ্য প্রায় দেড় কোটি টাকা

শেখ লিপন আহমেদ, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জ ডায়াবেটিক সোসাইটিতে ১০৯ জনের অবৈধ নিয়োগ বাতিল হয়েছে। তাদের কোন লেনদেনের দায়ভারও সোসাইটি বহন করবে না। সরকারের নিয়ম-নীতি ও বিধিমালা মেনেই সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক বিশেষ সভায় বিশদ আলোচনা শেষে এ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গোপালগঞ্জ ডায়াবেটিক সোসাইটি’র নিয়োগ ও কর্মকান্ড নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই গোপালগঞ্জ সরগরম হয়ে উঠছিল। নানা অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসে। সোসাইটির সভাপতি হওয়ায় জেলা প্রশাসকও বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন। ফলে গত ৭ এপ্রিল এক জরুরী সভায় সোসাইটির পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একটি এডহক কমিটি ও একটি অডিট কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।



এরপর ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ৪ ঘন্টা ব্যপী ওই বিশেষ সভা। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত ওই সভায় আলোচনায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম-বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহম্মদ আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, সাবেক পৌর-মেয়র আলহাজ্জ্ব হাসমত আলী সিকদার (চুন্নু), আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইউসুফ আলী খান, সালাউদ্দিন পান্না, জেলা বিএমএ এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মোশারফ হোসেন ও সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারী মৃণাল কান্তি রায় চৌধুরী (পপা) সহ অনেকে।

সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল বাকী জানিয়েছেন, সোসাইটি’তে একটি ঔষধ কোম্পানীর প্যাডে ১০৯ জনের নাম, ঠিকানা ও টাকার অংক বসানো একটি তালিকা ছাড়া আর কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। ওই তালিকার হিসেব অনুযায়ী নিয়োগকৃতদের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সদস্য বৃদ্ধির নামে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার একটি টাকাও সোসাইটির নিজস্ব এ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি। তিনি এ সময় আরও জানান, সোসাইটির সেক্রেটারী ডাঃ আবিদ হাসান শেখ ও কোষাধ্যক্ষ ডিসি অফিসের সাবেক নাজির ইমদাদুল হক স্থানীয় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে একটি যৌথ হিসাব খুলে টাকা গুলো রেখেছেন। সেই এ্যাকাউন্টেও সর্বশেষ স্থিতি পাওয়া গেছে মাত্র ৬৮ লাখ টাকা।

এক পর্যায়ে ওই সভায় নিয়োগ বাণিজ্যের কথা স্বীকার করেন গোপালগঞ্জ ডায়াবেটিক সোসাইটি’র সেক্রেটারী জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ আবিদ হাসান শেখ। ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে টাকা রেখে ভুল করেছেন স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, এখন চাকরী পেতে গেলে টাকা লাগে, সব খানেই এখন নিয়োগ-বাণিজ্য হয়। তাই আমিও নিয়োগ বাণিজ্য করেছি। তবে কিছু লোক অন্য ভাবেও কিছু টাকা পয়সা খেয়ে গেছে। কোষাধ্যক্ষ সাবেক নাজির ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, তার সেক্রেটারী যখন যে ভাবে যা করতে বলেছেন, তিনি তাই করেছেন। এ ব্যাপারে তার কোন বক্তব্য নেই।

সভায় জেলা বিএমএ ’এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শফিকুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্য সকল ডাক্তাররা নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, ডায়াবেটিক সোসাইটির সেবাদান যে ভাবে চলছিল, তা অক্ষুন্ন থাকবে এবং স্থানীয় সকল ডাক্তার ও তাদের সংগঠন আগের মতোই সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

গোপালগঞ্জ ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার জানিয়েছেন, সরকারের কোন রকম নিয়মনীতি না মেনে ডোনেশনের নামে টাকা নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে ওই ১০৯ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। সোসাইটি তাদেরকে কোন নিয়োগপত্রও দেয়নি। খুব শীঘ্রই সোসাটির নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে এবং সরকারের নিয়ম-নীতি ও বিধিমালা মেনে নতুন করে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। এছাড়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সদস্য ফি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সোসাইটি’র নতুন সদস্য হওয়া যাবে। আর যারা চাকরীর জন্য টাকা দিয়েছেন, তারা যা’তে ক্ষতিগ্রস্থ না হন বা তাদের টাকা যা’তে ফেরত পান, সে জন্য প্রশাসন তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা দিবে।

No comments

Powered by Blogger.